ফ্রিজে ২৮ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস! গবেষণার তথ্যে চাঞ্চল্য

দিনে দিনে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে মারণ ভাইরাস করোনা। কোভিড-১৯ হানায় ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২ লক্ষ ১১ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের মতোই বিশ্বের বেশ কিছু প্রান্তে এই মুহূর্তে চলছে লকডাউন। আর সেই লকডাউনের কারণেই আর্থিক ভরাডুবিও নানান দেশে প্রকট হচ্ছে। সুতরাং সেই আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে ধাপে ধাপে লকডাউন উঠেও যাবে অনেক দেশেই।
কিন্তু এই মারণ ভাইরাস কি আমাদের ছেড়ে যাবে?
একদমই না! আপাতত ভ্যাকসিন বাজারে না আসা অবধি সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং আর মাস্ককেই আমাদের আপন করে নিতে হবে। আর এমনই ভয়ের আবহে আম আদমির মনে আরও কৌতূহল জাগছে, আর কার দ্বারা কোভিড-১৯ সংক্রমণের সম্ভাবনা চূড়ান্ত? জামা, জুতো থেকে শুরু করে খবরের কাগজ, টেবল-চেয়ার, দরজা-আলমারির হাতল — এসব রকমারি জিনিস থেকে কী করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা কতটা?
আর আপনার ফ্রিজ? আপনার ফ্রিজের অন্দরে করোনাভাইরাস জ্যান্ত অবস্থায় কতক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারে জানেন? জানার প্রয়োজন কিন্তু রয়েছে। রয়েছে উদ্বেগের কারণও। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই কোভিড-১৯ সংক্রমণ কালে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে ফ্রিজ! আর তা থেকে প্রতিকারের উপায়ই বা কী?
ফ্রিজের ভিতর জ্যান্ত অবস্থায় কতক্ষণ থাকতে পারে কোভিড-১৯?
চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সেখানে পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, -২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে অন্যান্য করোনাভাইরাসগুলি কমপক্ষে দুই বছরের জন্য বেঁচে থাকতে পারে।
অন্য আরও বেশ কিছু সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, SARS-CoV এবং MERS-CoV এর মতো ভাইরাসগুলি তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং আলো ইত্যাদির ভিত্তিতে নানা তলে বেশ কিছু দিনের জন্য বসবাস করতে পারে। রিপোর্টগুলিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফ্রিজের তাপমাত্রা অর্থাৎ ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে MERS-CoV কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা অর্থাৎ তিন দিনের জন্য সক্রিয় অবস্থায় থাকতে পারে।সমীক্ষা কী বলছে?
কিছু দিন আগেই সংবাদমাধ্যম NBC Bay Area-র তরফে একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রায় অর্থাৎ ফ্রিজের অন্দরের যে তাপমাত্রা সেখানে কমপক্ষে ২৮ দিনের জন্য টিকে থাকতে পারে SARS-CoV ভাইরাস। আর এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে, ২০১০ সালের আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবাইলজি-র একটি গবেষণার ভিত্তিতে।
তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার হেরফেরে SARS করোনাভাইরাস যা কোভিড-১৯ ভাইরাসের (SARS-CoV-2) সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত, তার উপর রিসার্চ চালিয়ে দেখা হয়েছে আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবাইলোজির তরফে।
সেখানে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে, কম আর্দ্রতর এবং ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (৪.৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) কম তাপমাত্রায় করোনাভাইরাস আরও সতেজ হয়ে ওঠে। ঠিক যে তাপমাত্রা থাকে ফ্রিজের ভিতরে।
আর এক বিখ্যাত ভাইরোলজিস্টের চাঞ্চল্যকর দাবি!
এ ছাড়াও সংবাদমাধ্যম NBC Bay Area-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বিশ্ববিখ্যাত ভাইরোলজিস্ট এবং গবেষণা বিজ্ঞানী ডক্টর ওয়ার্নার গ্রিনে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন।
ডক্টর গ্রিনের দাবি, “করোনাভাইরাসের প্রকৃতি কিছুটা স্যাঁতস্যাতে ধরনের। নানা তলে বেশ কিছু সময়ের জন্য বেঁচে থাকতে পারে এই ভাইরাস।”
২০১০ সালের আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবাইলজি-র করা ওই গবেষণার অঙ্গ ছিলেন না ডক্টর গ্রিনে। তবে তিনিও ওই গবেষণায় উঠে আসা তথ্যের সঙ্গেই কিছুটা একমত।
ডক্টর গ্রিনে ঠিক কী বলছেন?
দোকান বা বাজার থেকে কিছু কিনে আনলে তা আগে খুবই ভালো করে জীবাণুমুক্ত করা উচিত। ডক্টর গ্রিনের কথায়, “আসল বিষয়টা হচ্ছে কখনও বাজার বা দোকান থেকে কিনে আনা যে কোনও বস্তু ফ্রিজে ভরতে হলে আগে সেটাকে খুব ভালো করে জীবাণুমুক্ত করা উচিত।
পাশাপাশিই তাঁর বক্তব্য, “আমি এবং আমার স্ত্রী যেটা করি সেটা হচ্ছে, খাবারের প্যাকেট বা বাক্সকে আমরা ভালো করে একটি তোয়ালের সাহায্যে লাইজলের সাহায্যে পরিষ্কার করে নিই। তারপর খুব ভালো করে ওই ফুড প্রোডাক্ট বাক্সের কার্ডবোর্ডের উপরের পৃষ্ঠটা খুব ভালো করে কয়েক বার পরিষ্কার নিই।”
প্রতিকারের উপায় –
- প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, বাজার বা মাসকাবারি জিনিসপত্র ভালো করে জীবাণুমুক্ত করেই ফ্রিজে ঢোকাতে হবে। এ ছাড়াও আপনার ফ্রিজে যাতে কোনও মতে করোনাভাইরাস ঢুকে আসন গেড়ে না বসে, তার বেশ কিছু উপায় বাতলে দিলেন ডক্টর গ্রিনে।
- একটি বালতিতে অ্যালকোহল যুক্ত কোনও স্যানিটাইজারের সাহায্যে জীবাণুমুক্ত করার তরল তৈরি করতে হবে। গ্রিনের কথায়, ‘করোনাভাইরাস সম্পূর্ণরূপে দ্রবীভূত করতে প্রয়োজন অ্যালকোহল বা সাবান এবং জল।’
- ডক্টর গ্রিনে বাড়িতেই জল এবং ব্লিচের সংমিশ্রণে জীবাণুনাশক তৈরি করে নিতে বলছেন ডক্টর গ্রিনে। তাঁর আরও বক্তব্য, ৪ লিটার জলের সঙ্গে ১/৩ কাপ ব্লিচ মিশিয়ে মিশ্রণটি তৈরি করে নিন। এই উপায় না পেলে গরম জলে কিছুটা সাবান ফেলে দেওয়ার কথাও বলছেন গ্রিনে।
- এবার এই মিশ্রণে একটি শুকনো তোয়ালে ভালো করে ভিজিয়ে নিতে হবে।
- এবার ফ্রিজে যে খাবারের বাক্স বা প্যাকেটগুলি রাখবেন খুব ভালো করে সেগুলিকে ওই তোয়ালে দিয়ে বেশ ভালো করে কয়েকবার পরিষ্কার করতে হবে।
- তাঁর আরও বক্তব্য, ‘যে ভাবে টেবল বা অন্য কোনও তল জীবাণুমুক্ত করা হয়, সেই ভাবেই জীবাণুমুক্ত করতে হবে এই খাবারের প্যাকেটগুলির তল।’
- এখানেই শেষ নয়। প্রতিনিয়ত নিয়ম করে ফ্রিজের কন্টেনারগুলিকে জীবাণুমুক্ত করে যেতে হবে এই পদ্ধতিতেই।
- প্রতিবার জীবাণুমুক্ত করার পর ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে হাত। ধুয়ে ফেলতে হবে বাজারের থলিও।
ফ্রিজারের ক্ষেত্রে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি?
ডক্টর গ্রিনের কথায়, “এখনও অবধি পরিষ্কার নয় যে, ডিপ ফ্রিজ বা যেখানে ০ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা সেখানে কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। তবে রিস্ক না নিয়ে জমে যাওয়া বা হিমায়িত কোনও বস্তুকে জীবাণুমুক্ত করে নেওয়াই ভালো।
ফ্রিজারের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও ভয়ংকর এবং অসুবিধারও। কারণ হিমশীতল অবস্থাতেও অনেকক্ষণই বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। সুতরাং এখনও কিছু প্রমাণ হওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা অবশ্যই জরুরি।”
সুত্র-ইন্ডিয়া টাইমস